বিশ্ব সিকেল সেল অ্যানিমিয়া দিবস
বিশ্ব সিকেল সেল অ্যানিমিয়া দিবস
প্রতিবারের ন্যায় এবারও নর্থ ইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজী বিভাগ বিশ্ব সিকেল সেল আ্যানিমীয়া দিবস ২০২৩ পালন করছে।
প্রতি বছর ১৯ জুন বিশ্ব সিকেল সেল সচেতনতা দিবস পালিত হয়। সিকেল সেল রোগ হল বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক পরিচিত একটি জিনগত ব্যাধি। দিবসটি পালনের লক্ষ্য হ’ল সিকেল সেল রোগ, রোগী এবং তাদের পরিবার ও জনসাধারণের মধ্যে সিকেল সেল রোগ সম্পর্কে জ্ঞান এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
দিবসটি উপলক্ষে নর্থ ইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজী বিভাগ জন সচেতনতার জন্য সিকেল সেল রোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।
সিকেল সেল অ্যানিমিয়া দিবসটি প্রতিটি সমাজ, দেশ, রাষ্ট্র এবং সমগ্র বিশ্বকে সিকেল সেল অ্যানিমিয়া রোগ এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জেনেটিক হিমগ্লোবিন অন্যান্য রোগ থেকে মুক্ত করার জন্য পালন করা হয়। থ্যালাসেমিয়া রোগীরা যেন সুস্থ মানুষের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ-সুবিধা ও সেবার উন্নয়নে জনগণকে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করার জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান দের ও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এই জন্য নর্থ ইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি ও রক্ত রোগ বিভাগের এর আয়োজনে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বৈজ্ঞ্যানিক সভা ও বহিবিভাগে রোগিদের সনাক্তকরন সেবা প্রদান করেন বিভাগের ইনচার্জ ডাঃ আবু ইউসুফ মোঃ নাজিম ও ডাঃ আবরার আহমেদ চৌধুরী।
একজন সিকেল সেল অ্যানিমিয়া রোগীর জন্য একটি সঠিক দিক নির্দেশনা খুব গুরুত্বপূর্ণ । এই নির্দেশনা টি সঠিকভাবে মেনে চলার ফলে একজন সিকেল সেল অ্যানিমিয়া রোগী সুন্দর একটি জীবন অতিবাহিত করতে পারে। এটি এমন কোন রোগ নয় যে একবার দুবার চিকিৎসা নিলে ভাল হয়ে যাবে। এটি সারা জীবনের একটি রোগ। তাই এই জীবন একটু সহজ ও সুন্দর করতে প্রয়োজন একজন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ এবং নির্দিষ্ট একটি নির্দেশিকা ।
সিকেল সেল অ্যানিমিয়া একটি জিনগত রোগ হওয়ায় তা যে কোনও মূল্যে ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করা উচিত। এটি কেবল আপনাকে আক্রান্ত করে না বরং আপনার শিশুকেও প্রভাবিত করতে পারে। আক্রান্ত শিশু পিতামাতার কাছ থেকে সিকেল সেল এর বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করে। এই রোগের কারণে লোহিত রক্তকণিকা ‘কাস্তে’ হয়ে যায় বা কলার আকৃতির হয়ে যায় যখন তারা চাপে থাকে এবং এটি রক্তনালীগুলির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়া তাদের পক্ষে কঠিন করে তুলতে পারে। সাভাবিক অবস্থায় আমাদের লোহিত রক্তকণিকা সাধারণত গোলাকার এবং নমনীয় হয়, যা তাদের রক্তধমনীর মাধ্যমে অবাধে ভ্রমণ করতে দেয়, তবে সিকেল সেল রোগের সাথে, কিছু কোষ ক্রিসেন্ট চাঁদের আকৃতির হয়ে যায় এবং রক্তনালীগুলি মেনে চলে। ফলস্বরূপ, রক্তনালীগুলির মাধ্যমে রক্ত প্রবাহ ধীর বা বন্ধ হয়ে যায়, মারাত্মক রক্তসল্পতা, অস্বস্তি, অঙ্গক্ষতি এবং অনেকাংশে স্ট্রোক, একুউট চেস্ট সিন্ড্রোম, অন্ধত্ব, হাড়ের অবক্ষয় এবং বেদনাদায়ক পেনাইল উত্থানের কারণ, ভাস্কুলার থ্রম্বসিস, মারাত্মক ইনফেকশন এর কারণ হয়ে থাকে।
সময়ের সাথে সাথে, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা লিভার, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট এবং প্লীহার মতো অঙ্গগুলির ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে যা এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। সিকেল সেলের চিকিৎসায় বেশিরভাগ জটিলতা প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।
ব্যাধিটির একমাত্র সম্ভাব্য নিরাময় হ’ল এলোজেনিক বোন ম্যেরো ট্রান্সপ্লান্ট /অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন। যাইহোক, এমনকি এই চিকিৎসা শুধুমাত্র সীমিত সংখ্যক আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সম্ভব যাদের উপযুক্ত দাতা রয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে অনেক আধুনিক চিকিৎসা আছে যা রোগিদের সাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে অনেকাংশে সহায়তা করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জেনেটিক কাউন্সেলিং: বর্তমান পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ এবং জেনেটিক সেবা বাস্তবায়নের জন্য একটি কাঠামো তৈরী তিব্র জরুরী।
আপনি ও আপনার পরিবার নিকটতম নর্থ ইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগে চেক- আপ করে নিশ্চিত হয়ে নিন এবং সিকেল সেল অ্যানিমিয়া নির্ণয় করেন যথাশিঘ্র। এই ব্যাধিটির জন্য চিকিৎসা শুরু করতে কখনই দেরি করা উচিত না। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায় তত দ্রুত এর খারাপ প্রভাবগুলি হ্রাস করা যেতে পারে।
নিয়মিত স্কিনিং করে আসুন আমরা সিকেল সেল অ্যানিমিয়া হ্রাস এবং নির্মূল করে একটি স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হই।